Monday 15 June 2020

মন জানে না মনের খবর, পড়শি জানবে ক্যামনে?

ছেলেটি হাসিখুশি, সে কি আত্মহত্যা করতে পারে?

মেয়েটি জনপ্রিয়, সে কি আত্মহত্যা করতে পারে?

লোকটি ধনী, সে কি আত্মহত্যা করতে পারে?

মহিলাটির সুন্দর সাজানো সংসার, সে কি আত্মহত্যা করতে পারে?

কোনো আত্মহত্যার খবর যখনই আসে এই প্রশ্নগুলো ঘোরেফেরে। সত্যিই কি এই প্রশ্নগুলোর কোনো উত্তর হয়? এই উত্তর কি কখনো হতে পেরেছে সমাধানমালা?          

    বাউলেরা বারবার বলে গেছেন, মনকে নিবিষ্ট রাখতে। মনকে নিয়ন্ত্রণ করা মানে বিশ্বকে জয় করা। মনকে আমরা কখনো জয় করতে পারিনি বা করার চেষ্টাই করিনি। নানা কারণে আমাদের মানসিক অবসাদ আসতে পারে‍‍‍‍  কলহ, বিবাদ, সম্পর্ক, কেরিয়ার, যৌনতা কোথাও কোনো গণ্ডগোল দেখা দিলে। এই অবসাদ থেকে মুক্তি পেতে কেউ অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়েন, কেউ কেউ আত্মহত্যা করে বসেন। এর মাঝামাঝি কিছু মানুষ আছে যাঁরা অপরাধমূলক কাজে জড়াতে বা আত্মহত্যা করতে ভয় পান। 

    কিছুদিন আগে একজনের ফেসবুক টাইমলাইন দেখে সন্দেহ হয়। না, টাইমলাইনে সে আত্মহত্যা সম্পর্কিত কোনো পোস্ট করেনি। মৃত্যু সম্পর্কিত কোনো ইঙ্গিতও দেয়নি। কেন জানি না, বারবার মনে হচ্ছিল কোনো সমস্যার মধ্যে আছে। আমি ওই ব্যক্তির কাছের একজনের থেকে খবর নিয়ে জানতে পারি সে মানসিক অবসাদে ভুগছে। কাউন্সিলিং করিয়েও বেরোতে পারছে না। প্রণয়ঘটিত কারণ। সে বেরোতে চাইছে। আর বেরোতে চাইছে বলেই ফেসবুকে সারদিনে পোস্ট করছে নিজের ছবি, নানারকম স্ট্যাটাস। নিজের টাইমলাইনে কমেন্টের রিপ্লাইতে খিল্লি করছে। চাইছে মন ডাইভার্ট করতে। কে বুঝবে ওর সমস্যার কথা? ব্যক্তিটি যদি নিজের এডিট করা হাসিখুশি মুখের ছবি পোস্ট করার দশমিনিটের মধ্যে আত্মহত্যা করে তাহলে কি তাকে বলব সে ঠিক ছিল?

    কিছুদিন আগেই এক স্কুল ফ্রেণ্ডের আত্মহত্যার একটা ভিডিও ফুটেজ হোয়াটস্‌অ্যাপে আসে। বন্ধুটার স্ত্রী ও মেয়ে থাকা সত্ত্বেও পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে। ভিডিও দেখে সেই রাতে আমি ঘুমোতে পারিনি। ফেসবুক লাইভে এসে ঝুলে পড়ে। দড়ি বাঁধা থেকে শুরু করে কীভাবে আত্মহত্যা করল সবটাই ফুটেছে ধরা পড়েছে। আর ফোনে বারবার তার প্রেমিকাকে কথা বলার অনুরোধ করছে, কিন্তু মেয়েটি কথা বলতে চায় না। ফোনেই হুমকি দেয়, কথা না বললে আত্মহত্যা করবে। মান-অভিমানে এমন মৃত্যুর কথা আমারা অনেকেই বলে ফেলি। ওর সেই প্রেমিকা কি ভেবেছিল, সত্যিই ফোন লাইনে রেখে, ফেসবুক লাইভে এভাবে তার প্রেমিক আত্মহত্যা করবে? বুঝতে পারলে কি সে কথা বলত না?

    আমাদের মনই জানে না মনের খবর, পড়শি জানবে ক্যামনে? মানুষ মানুষের সঙ্গে কথা বলতে বলতে ক্লান্ত হয়ে যায়। কিন্তু সে যদি নিজের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে পারে কখনো ক্লান্ত হবে না। মন তখনই নিয়ন্ত্রণে আসবে যখন বশে থাকবেপুরাণ থেকে কোরাণ সর্বত্রই আত্মহত্যাকে ঘৃণাযোগ্য অপরাধ বলা হয়েছে। দিনের পর দিন এই ঘৃণাযোগ্য অপরাধ বেড়েই চলছে। এর দায় কার? অপরাধী কে? কোনো উত্তর হয় না। খুব সকালে উঠে কোনোদিন যদি দেখি‍‍‍‍  আমাদের মৃত লাশের ওপর সকালের মিঠে রোদ একা একা কান্না করছে আর আমাদের সান্ত্বনা দেওয়ার মানুষগুলো ফিরে গেছে খুব ভোরে, সেদিন আমাদের কি খুব বিষণ্ণ লাগবে?

    আমাদের নিজের সঙ্গে কথা বলার সময় কি আছে? দ্রুতগামী বিশ্বের মানুষ আরও দ্রুতগামী। সবাই ছুটছে। সবাই ব্যস্ত। কান বন্দক। কানে হেডফোন। কাকে বলবে এই অবসাদের কথা? কেউ শুনবে না। শুনলেও ভুলে যাবে। চুপচাপ বসে থেকে মনকে জিজ্ঞাসা করো। কী পারবি তুই? তুই কি সিনেমা দেখবি? তুই কি গান শুনবি? তুই কি আমার সঙ্গে কলেজ স্ট্রিটের পুরোনো মার্কেটে ঘুরবি? তুই কি অফিসের কাজে আমাকে হেল্প করবি? তুই কি রেলস্টেশনের ভিড়ের মধ্যে ফাঁকা জায়গাটা খুঁজে দিবি? বিকালে গঙ্গার ধারে আমার সঙ্গে সূর্যাস্ত দেখবি? সারাদুপুর বৃষ্টিতে ভিজবি? ভোরে উঠে পাখিদের ডাক শুনবি? আরও হাজার প্রশ্ন করো। মনই উত্তর দেবে। মনই নিজের মুক্তির উপায় বলবে।

    মন বড়ো নিঃসঙ্গ। সে সঙ্গী চায়। তুমি নিজেই একমাত্র তার সঙ্গী। তাকে আশ্রয় দাও। সে গৃহহীন হলে আরও দাপাদাপি করবে।

 

 

5 comments:

  1. আমি মনোরোগ বিশেষজ্ঞ নই, তবু বলি আবেগপ্রবণ মানুষের এটা সহজাত প্রবৃত্তি। এক ধরণের internal ego clash নিজের সাথেই। ঘটনা ঘটানো টা সম্পূর্ণ তাৎক্ষণিক। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি...
    এ নিয়ে যতোই আলোচনা হোক না কেন সবটাই অসম্পূর্ণ থেকে যায় ভাই। তবে তোমার আলোকপাত খুব লজিক্যাল। ভালো লাগলো লেখাটা।

    ReplyDelete
  2. হ্যা, দাদা। তবুও আমাদের বেরিয়ে যাওয়া দরকার। আমি নিজেও একটা সময় এই পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গেছি। সময়টা থেকে বেরিয়ে আসা খুব কঠিন।

    ReplyDelete
  3. আমরাই এখন আমাদের মনের কথা শুনি না,
    মনই তাই শোধ তোলে ।
    দারুন ভাবে সত্যিটা বলেছিস ।
    খুব সহজ ভাষায়,আমার বোঝার ভাষায়😘
    খুব ভাল

    ReplyDelete
  4. ভালো লিখেছ।বেঁচে থাকার সহজ আনন্দের কথা তুলে ধরেছ

    ReplyDelete
  5. খুব ভালো বলেছ। কিন্তু যদি কোন মানুষ তোমার আত্মার অঙ্গ হয়ে ওঠে। আর সে তোমাকে অকারণে আঘাত করতে থাকে। তখন নিজেকে আর ভালোবাসা যায় না। বস্তুত নিজেকে ভালোবাসাটা পৃথিবীর সবথেকে দুরূহ কাজ। যে নিজেকে একবার ভালোবাসতে পারবে তার কাছে পৃথিবীর মোহ কাটানোর মানসিকতা ঘেঁষতে পারবে না।

    ReplyDelete